১। সুর্যমুখী তেল বা সুর্যমুখী বীজঃ
সূর্যমুখী তেল ভিটামিন ই সমৃদ্ধ, যা শরীরের এন্টি-অক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে। এটি সরাসরি হৃদরোগ প্রতিরোধ এবং আপনার ইমিউন সিস্টেম বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এন্টি-অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন ই সমৃদ্ধ সূর্যমুখী তেল গ্রহণ করলে আপনার ত্বক সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে সুরক্ষিত হবে। ভিটামিন-ই ‘টোকোফেরল’ নামেও পরিচিত।এর কাজ মূলত এন্টি-অক্সিডেন্ট হিসাবে দেহের জন্য ক্ষতিকর ফ্রী রেডিকেল ধ্বংস করা। হাঁপানি (অ্যাজমা), আর্থ্রাইটিস এর তীব্রতা হ্রাস করতেও সূর্যমুখী তেল বিশেষ ভূমিকা রাখে। তেলটি সাধারণ ইমিউন সিস্টেমের উপর একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে এবং সংক্রমণ রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
২।মাছঃ
কিছু মাছে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩, যেমন স্যালমন, ম্যাকরেল এবং তুনামাছ (সপ্তাহে অন্তত দুইবার খাওয়া উচিত)। নির্দ্বিধায় খাওয়া যাবে ছোট মাছ যেমন- মলা, কাচকি, টাকি, বেলে ইত্যাদি। এছাড়াও বেছে নেওয়া যেতে পারে পাবদা, শিং, কৈ ও মাগুরকে। ইলিশ মাছ বেশি করে খাবেন এতে উপকারী চর্বি ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড বেশি পরিমাণে থাকে। এছাড়া আরও অনেক মাছ আছে যেগুলোতে চর্বি নেই সেগুলো খাওয়া যাবে। একটু সতর্ক দৃষ্টি রাখলেই আপনি বুঝতে পারবেন মাছটি চর্বিযুক্ত কি-না। মিঠা পানির তৈলাক্ত মাছ না খাওয়াই ভালো। তবে যেকোন সামুদ্রিক মাছ খাওয়া যাবে। গবেষকরা মনে করেন, সামুদ্রিক মাছ হৃৎপিন্ডের সুস্থতা রক্ষায় সহায়ক। তবে মিঠা পানির বড় মাছের চর্বি বাদ দিয়ে শুধু মাছটুকু খাওয়া যাবে।
৩।সয়াফুডঃ
‘সয়াবিন’ শব্দটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সয়াবিন তেল। কারণ আমাদের দেশে সয়াবিনের তেল বহুল পরিচিত এবং ব্যাপক ব্যবহৃত হলেও সয়াবিন অর্থাৎ সয়া বীজ তেমন একটা প্রচলিত নয়। শুধুমাত্র ডাল হিসেবেই কিছু অঞ্চলে খাওয়া হয়। সয়াবিন থেকে শুধু তেল নয়, তৈরি হয় আরো অনেক কিছু। আর সয়বিন থেকে তৈরি পণ্যকে সয়া ফুড বা সয়া প্রোডাক্ট বলে । সয়া প্রোডাক্ট যেমন- সয়া দুধ, সয়া বিন, টফু ইত্যাদি প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখুন। এই খাবারগুলো শরীরের থেকে কোলেস্টেরল এবং অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট দূর করে থাকে।সয়া ফুড কেবল কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে তা নয়, ভাস্কুলার ফাংশন নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে। তাই খাবার মেন্যুতে পর্যাপ্ত পরিমাণে সয়াবিন রাখুন। কারণ হজমে সাহায্যকারী এনজাইম ট্রিপসিনের কার্যকলাপ কিছুটা ব্যাহত করে সয়াবিন। ফাইবার সমৃদ্ধ সয়াবিন হার্টের জন্য খুব ভালো। সয়াবিন কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। সয়াবিন ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর খনি।
৪।লাল আটার রুটিঃ
সাদা আটা বা ময়দায় খাদ্য আঁশের পরিমাণ কম থাকে। তবে ভুসি সমেত লাল আটায় অনেক আঁশ থাকে। তাই লাল আটার রুটি খাওয়ার পর রক্তের গ্লুকোজ ধীরে ধীরে বাড়ে। তাই হৃদরোগ প্রতিরোধে, ওজন কমাতে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে লাল আটার জুড়ি নেই। সকালের নাশতায় যাঁরা রুটি পছন্দ করেন, তাঁরা সাদা আটা বা ময়দার পরিবর্তে ভুসি সমেত লাল আটার অভ্যাস করুন।
৫।কাঠবাদামঃ
কাঠবাদামের মনো স্যাচুরেটেড ফ্যাট, প্রোটিন ও পটাশিয়াম হার্ট ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কাঠবাদামের ভিটামিন ই হার্টের বিভিন্ন রকম রোগ হবার আশঙ্কা দূরে রাখে। কাঠবাদামে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করে এবং পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। যেমন অ্যালমন্ড, ছোলা এবং আখরোট ফল।
৬।অলিভ অয়েলঃ
ডায়াবেটিকসের ঝুঁকি কমানো ও ক্যানসার প্রতিরোধের পাশাপাশি দুর্বল হার্টের রোগীদের জন্য অলিভ অয়েল খুবই উপকারী। সম্প্রতি এক গবেষণায় বিষয়টি প্রমাণ করেছেন গবেষকরা। স্বাস্থ্য সাময়িকী সার্কুলেশনে প্রকাশিত নতুন গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দুর্বল হার্টের জন্য জ্বালানি হিসেবে প্রয়োজনীয় চর্বির যোগান দেয় অলিভ অয়েল।সাধারণত একটি হৃদপিণ্ড তার স্বাভাবিক সংকোচন ও প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি নেয় শরীরে জমা চর্বি থেকে।কিন্তু দুর্বল হার্ট এই চর্বি গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়। ফলে হার্ট শুধু ভালোভাবে কাজ করতে পারে না তা নয়, বরং গ্রহণ করতে না পারা চর্বি জমে হৃদপিন্ডের আর্টারিতে ব্লক বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। অথচ অলিভ অয়েলে আছে ওলিয়েট নামের এক ধরনের উপকারী ফ্যাট যার সহায়তায় দুর্বল হার্ট সহজেই প্রয়োজনীয় চর্বি গ্রহণ করতে পারে।
৭।সেদ্ধ শিমঃ
ননস্টার্চ ভেজিটেবলস যেমন- বাঁধাকপি, ফুলকপি, বরবটি, বেগুন, শিম, গাজর, পালং শাক, শশা, লেটুস পাতা, মাশরুম, ঢেঁড়স, মূলা, বীট ও টমেটো ইত্যাদি বেশি পরিমাণে খান। করোনারি হার্ট ডিজিস কমাতে সহায়ক হয়ে ওঠে ম্যাগনেশিয়ামপূর্ণ শিম, শস্য এবং সবুজ পাতাবহুল শাক-সবজি। এসব খাবারে স্ট্রোক এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস এর ঝুঁকিও কমে আসে। এক গবেষণায় এসব তথ্য দেওয়া হয়। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছিল জার্নাল বিএমসি মেডিসিন এ। চীনের ঝেজিয়াং ইউনিভার্সিটি এবং ঝেংঝু ইউনিভার্সিটির গবেষকরা তাদের গবেষণায় জানান, সর্বোচ্চ পর্যায়ের ম্যাগনেশিয়ামপূর্ণ খাবার গ্রহণে করোনারি হার্ট ডিজিসের ঝুঁকি হ্রাস পায় ১০ শতাংশ। এছাড়া স্ট্রোকের ঝুঁকি ১২ শতাংশ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি কমে আসে ২৬ শতাংশ।
৮।ফলমূল ও সবুজ শাক–সবজিঃ
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল যেমন: পেয়ারা, আমড়া, আমলকি, লেবু, জলপাই, জাম্বুরা, পাকা টমেটো, কামরাঙা, পাকা পেঁপে, আনারস ইত্যাদি বেশি করে খান।নিয়মিত ফলমূল ও সবুজ শাক-সবজি খেলে হার্ট ভালো থাকে। বিশেষ করে, তাজা ফলের রস হার্টের জন্য খুবই ভালো। সবুজ শাক-সবজির মধ্যে পালংশাক, লাউ, কুমড়া, গাজর, বিট, বাঁধাকপি, ভুট্টা, লাল আলু ইত্যাদি হার্টের জন্য বেশ উপকারী। এর পাশাপাশি প্রতিদিন প্রয়োজনমত সালাদ ও প্রচুর পরিমাণে পানি খাবেন। প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ গ্রাম আঁশযুক্ত খাবার খাদ্য তালিকায় থাকা উচিত। এজন্য প্রতিদিনের খাবার তালিকায় সতেজ ফল ও তাজা শাক সবজি রাখুন।
৯।পনিরঃ
পনির কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। অনেকই ভাবেন পনির চর্বি জাতীয় ফলে পনির খেলে কোলেস্টেরল বেড়ে যায়। এই ধারনা একদম সঠিক না। পরিমান মত পনির খেলে তা আপনার শরীরের খারাপ কোলেস্টরেলকে দূর করে। পনিরে প্রোবাইওটিক ব্যাকটেরিয়া আছে যা দেহে কোলেস্টেরল বাড়তে দেয় না। তবে সব সময় খেয়াল রাখতে হবে পরিমান বা প্রয়োজন অনুযায়ী খাওয়া উচিত পনির। পনির খেলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন সঠিক ভাবে হয়। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে থাকে। ফলে হার্টের সমস্যা কম দেখা যায়। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে থাকার ফলে হার্ট অ্যাটাক, স্টোক হবার সম্ভাবনা কম থাকে। হৃদরোগের সমস্যা কমে যায়। মার্জারিন বীজ এবং বিভিন্ন ফল (যেমন সূর্যমুখী বীজ, জলপাই, রেপিসেড, তিসি, পাম ফল) থেকে তেল বের করে তৈরি করা হয়।
১০। চাঃ
বিশেষ করে গ্রীন এবং ব্ল্যাক টি। বর্তমান সময়ে হার্টের জন্য সবচেয়ে বেশি ওষুধের কাজ করে সবুজ চা।এটা শুধু রক্তের শিরাকেই সচল রাখে না, শিরাকে রক্ষাও করে।গবেষকদের ধারণা, রক্তনালীর উপর গ্রিন টি’র প্রভাব রয়েছে। নিয়মিত গ্রীন টি গ্রহণ করা হলে রক্তনালী শিথিল হয় এবং রক্তচাপের পরিবর্তন হলেও তা স্বাভাবিক থাকতে পারে। এর ফলে রক্ত জমাট বেঁধে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
0 comments:
Post a Comment